Skip to main content

প্রশ্ন: কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলছেন যে, তিনি যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন। তাহলে আল্লাহ যদি কাউকে পথভ্রষ্ট করেন, তবে কেউ হারাম কাজ করলে সেই ব্যক্তি কেন তার জন্য দায়ী হবে?


উত্তর: মহান আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারীমের বিভিন্ন স্থানে বলেছেন যে, তিনি যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন। যেমন সূরা নিসার ৮৮ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,
.
فَمَا لَكُمْ فِى ٱلْمُنَٰفِقِينَ فِئَتَيْنِ وَٱللَّهُ أَرْكَسَهُم بِمَا كَسَبُوٓا۟ۚ أَتُرِيدُونَ أَن تَهْدُوا۟ مَنْ أَضَلَّ ٱللَّهُۖ وَمَن يُضْلِلِ ٱللَّهُ فَلَن تَجِدَ لَهُۥ سَبِيلًا
.
"অতঃপর তোমাদের কি হল যে, মুনাফিকদের সম্পর্কে তোমরা দু’দল হয়ে গেলে? অথচ আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে ঘুরিয়ে দিয়েছেন তাদের মন্দ কাজের কারণে! তোমরা কি তাদেরকে পথ প্রদর্শন করতে চাও, যাদেরকে আল্লাহ পথভ্রষ্ট করেছেন? আল্লাহ যাকে পথভ্রান্ত করেন, তুমি তার জন্য কোন পথ পাবে না।"
(আল-কোরআন, ৪:৮৮)
.
.
তবে একই সাথে আল্লাহ তাআলা এটাও বলেছেন যে, তিনি যাকে ইচ্ছা হিদায়াত দান করেন। মহান আল্লাহ বলেন,
.
ٱلَّذِينَ إِذَآ أَصَٰبَتْهُم مُّصِيبَةٌ قَالُوٓا۟ إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّآ إِلَيْهِ رَٰجِعُونَ
أُو۟لَٰٓئِكَ عَلَيْهِمْ صَلَوَٰتٌ مِّن رَّبِّهِمْ وَرَحْمَةٌۖ وَأُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلْمُهْتَدُونَ
.
"যাদের উপর কোন বিপদ নিপতিত হলে তারা বলে, নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহরই জন্য এবং নিশ্চয়ই আমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী।
তাদের উপরই রয়েছে তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও রহমত এবং তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত।"
(আল-কোরআন, ২:১৫৬-১৫৭)
.
.
তাহলে এখন দুটো প্রশ্ন থেকে যায় -
১) কাদেরকে আল্লাহ পথভ্রষ্ট করেন?
২) তাদেরকে কেন পথভ্রষ্ট করেন?
.
প্রথম প্রশ্ন যে, কাদেরকে আল্লাহ পথভ্রষ্ট করেন, তার জবাব আমরা মোটামুটি এই আয়াতটি থেকে পেতে পারি -
.
إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَسْتَحْىِۦٓ أَن يَضْرِبَ مَثَلًا مَّا بَعُوضَةً فَمَا فَوْقَهَاۚ فَأَمَّا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ فَيَعْلَمُونَ أَنَّهُ ٱلْحَقُّ مِن رَّبِّهِمْۖ وَأَمَّا ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ فَيَقُولُونَ مَاذَآ أَرَادَ ٱللَّهُ بِهَٰذَا مَثَلاًۘ يُضِلُّ بِهِۦ كَثِيرًا وَيَهْدِى بِهِۦ كَثِيرًاۚ وَمَا يُضِلُّ بِهِۦٓ إِلَّا ٱلْفَٰسِقِينَ
.
"আল্লাহ মশা কিংবা তার থেকে উচ্চ (অথবা ক্ষুদ্র) পর্যায়ের কোন বস্তুর উদাহরণ দিতে লজ্জাবোধ করেন না, সুতরাং যারা মুমিন (বিশ্বাসী) তারা জানে যে, এ উদাহরণ তাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে সত্য; কিন্তু যারা (কাফের) অবিশ্বাস করে তারা বলে যে, আল্লাহ কী অভিপ্রায়ে এমন একটি উদাহরণ দিয়েছেন? এতদ্বারা তিনি অনেককেই বিভ্রান্ত করেন আবার বহু জনকে সৎপথে পরিচালিত করেন। বস্তুতঃ তিনি সৎপথ পরিত্যাগীদের ছাড়া আর কাউকেও বিভ্রান্ত করেন না।"
(আল-কোরআন, ২:২৬)
.
অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা কেবল সৎপথ পরিত্যাগীদেরকেই পথভ্রষ্ট করেন। তবে সৎপথ পরিত্যাগীদের বৈশিষ্ট্য ঠিক কেমন এটা বোঝার জন্য এই আয়াতের তাফসির দেখা প্রয়োজন।
.
তাফসিরে আহসানুল বয়ানে উক্ত আয়াতের তাফসিরে এক স্থানে বলা হচ্ছে, "فِسق আল্লাহর আনুগত্য থেকে বের হয়ে যাওয়াকে বলে। আর এটা (আল্লাহর আনুগত্য থেকে বের হওয়া) সাময়িকভাবে একজন মু'মিনের দ্বারাও হতে পারে। তবে এখানে 'ফিসক্ব'-এর অর্থ হল, আল্লাহর আনুগত্য থেকে সম্পূর্ণরূপে বেরিয়ে যাওয়া। অর্থাৎ, কুফরী করা ও সৎপথ পরিত্যাগ করা। আর এ কথা পরবর্তী আয়াত দ্বারা আরো পরিষ্কার হয়ে যায়, যাতে মু'মিনদের মোকাবেলায় কাফেরদের গুণাবলীর উল্লেখ হয়েছে।"
(তাফসিরে আহসানুল বয়ান/আল-কোরআন, ২:২৬ আয়াতের তাফসির হতে বিবৃত)
.
অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা তাদেরকেই পথভ্রষ্ট করেন, যারা নিজে থেকে সত্যকে সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করে নিজেদের ইচ্ছাতেই পথভ্রষ্টতার পথ বেছে নেয়। একারণে আল্লাহ তাআলা বলেন,
.
أُو۟لَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ ٱشْتَرَوُا۟ ٱلضَّلَٰلَةَ بِٱلْهُدَىٰ وَٱلْعَذَابَ بِٱلْمَغْفِرَةِۚ فَمَآ أَصْبَرَهُمْ عَلَى ٱلنَّارِ
.
"তারাই হিদায়াতের পরিবর্তে পথভ্রষ্টতা এবং মাগফিরাতের পরিবর্তে আযাব ক্রয় করেছে। আগুনের উপর তারা কতই না ধৈর্যশীল।"
(আল-কোরআন, ২:১৭৫)
.
.
خَتَمَ ٱللَّهُ عَلَىٰ قُلُوبِهِمْ وَعَلَىٰ سَمْعِهِمْۖ وَعَلَىٰٓ أَبْصَٰرِهِمْ غِشَٰوَةٌۖ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ
.
"আল্লাহ তাদের অন্তকরণ এবং তাদের কানসমূহ বন্ধ করে দিয়েছেন, আর তাদের চোখসমূহ পর্দায় ঢেকে দিয়েছেন। আর তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি।"
(আল-কোরআন, ২:৭)
.
এখন দ্বিতীয় প্রশ্নটি ছিল যে, আল্লাহ তাআলা তাহলে কেন তাদেরকে সঠিকপথে আনেন না, যারা নিজেরা পথভ্রষ্টতা বেছে নিয়ে পথভ্রষ্ট হতে চায়? আল্লাহ তাআলা যদি ইচ্ছা করতেন, তাহলে তো তিনি তাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করতেন! তবে এর পরিবর্তে তিনি কেন আবার উল্টে তাদের পথভ্রষ্ট করছেন?
.
ব্যাপারটি বোঝার জন্য সহজ দুটি উদাহরণ দিলেই যথেষ্ট হবে আশা করি।
.
মনে করুন আপনি আপনার ঘরের দেওয়ালে ঘুষি মারতে শুরু করলেন। এবার আপনি ব্যাথা পাবেন, তাইতো? কারণটা কী? হয়ত বলবেন যে, ইট, সিমেন্টের দেওয়ালে ঘুষি মারলে তো ব্যাথা লাগবেই। কিন্তু এটা আসল কারণ নয়। আসল কারণটা হল নিউটনের তৃতীয় সূত্র যে, আপনি দেওয়ালের ওপর বল প্রয়োগ করলে দেওয়ালও সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া বল আপনার হাতে প্রয়োগ করবে। এখন যদি বলা হয় যে, আপনি দেওয়ালে ঘুষি মারলে আল্লাহ তাআলাও আপনার হাতে সাথে সাথেই পাল্টা সমান ব্যাথা তৈরি করে দেবেন - এই ব্যাপারটিতে তাহলে কার দোষ? আপনারই দোষ। কারণ আপনি নিজের ইচ্ছাতেই দেওয়ালে ঘুষি মারতে গেছেন।
.
আবার ধরুন যে, আপনি ঠিক করলেন, আপনি না খেয়ে থাকার রেকর্ড তৈরি করবেন, সেজন্য আপনি টানা এক সপ্তাহ খাবার থাকার পরও খাবার না খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। এখন আপনার শরীর যদি শুকাতে থাকে আর পেটে গ্যাস, অম্বল তৈরি হতে থাকে, আর তখন যদি বলা হয় যে, আল্লাহ তাআলা গ্যাস, অম্বল তৈরি করে দিয়েছেন আর আপনার শরীর শুকিয়ে দিচ্ছেন, তাহলে এখানে দোষটা আসলে কার?? এখানে দোষটা মশাই আপনারই। আল্লাহকে টানেন কেন এখানে??
.
একইভাবে, আপনি আল্লাহর হিদায়াতের পথ নিজের ইচ্ছায় ত্যাগ করবেন, আর এতে নিজের ইচ্ছাতেই পথভ্রষ্টতা বেছে নেবেন, তখন যদি বলা হয় যে, আল্লাহ তাআলা আপনায় পথভ্রষ্ট করেছেন, তখন আসল দোষটা কার?? আপনার নিজেরই। কারণ আপনিই এর জন্য দায়ী।
.
এমনকি আল্লাহ তাআলা এতটাই করুণাময় যে, যখন আপনি সত্যকে অল্প অল্প করে পরিত্যাগ করা শুরু করবেন, তখনও তিনি আপনাকে হিদায়েতের পথ দেখাতেই থাকবেন। মহান আল্লাহ বলেন,
.
سَنُرِيهِمْ ءَايَٰتِنَا فِى ٱلْءَافَاقِ وَفِىٓ أَنفُسِهِمْ حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُ ٱلْحَقُّۗ أَوَلَمْ يَكْفِ بِرَبِّكَ أَنَّهُۥ عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍ شَهِيدٌ
.
"আমি শীঘ্র তাদের জন্য আমার নিদর্শনাবলী ব্যক্ত করব বিশ্বজগতে এবং তাদের নিজেদের মধ্যে। ফলে তাদের নিকট সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে যে ওটাই সত্য। এটা কি যথেষ্ট নয় যে, তোমার প্রতিপালক সর্ব বিষয়ে অবহিত?"
(আল-কোরআন, ৪১:৫৩)
.
কিন্তু এরপরও যদি আপনি হিদায়াতের পথ সামনে পেয়েও তা নিজে থেকে পরিত্যাগ করতে থাকেন, আর এক পর্যায়ে সম্পূর্ণরূপে সত্য পরিত্যাগ করেন, তাহলে আল্লাহ তাআলা আপনাকে কি জোর করে সত্যপথ আপনার ঘাড়ে চাপিয়ে দেবেন?? কল্পনা করুন, শিক্ষক ছাত্রকে বলছে যে, ঠিকমত পড়বে, না হলে পরীক্ষায় ফেল করবে। ছাত্র কথা শোনে না। শিক্ষক আরও বোঝায়, ছাত্র তাও শোনে না। এরপর পরীক্ষায় ছাত্র ফেল করল, এখন দোষটা কী শিক্ষকের?? তিনি তো সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ছাত্র ব্যাটা যদি কথা না শোনে, পড়াশুনা না করে, তাহলে শিক্ষক কি পরীক্ষার খাতায় লিখে দিয়ে আসবে???
.
একইভাবে আল্লাহ তাআলা বলেন,
.
ٱلَّذِى خَلَقَ ٱلْمَوْتَ وَٱلْحَيَوٰةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًاۚ وَهُوَ ٱلْعَزِيزُ ٱلْغَفُورُ
.
"যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, তোমাদের পরীক্ষা করার জন্য - কে তোমাদের মধ্যে কর্মে উত্তম? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।"
(আল-কোরআন, ৬৭:২)
.
অর্থাৎ আপনার আমার জীবনটাও আখিরাত বা পরকালের জন্য কেবল পরীক্ষাস্বরূপ। কেননা আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে হালাল ও হারাম বেছে নেওয়ার জন্য স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি দিয়েছেন। একারণে হিদায়াতের পথ বেছে নিতেও তিনি আপনার ওপর জোর প্রয়োগ করবেন না, পথভ্রষ্টতা বেছে নিতেও জোর প্রয়োগ করবেন না।
.
এখন যদি আপনি নিজের ইচ্ছায় পথভ্রষ্টতার পথ বেছে নেন, তাহলে আল্লাহ তাআলা তো সেই পথেই আপনাকে পরিচালিত করবেন যে পথে আপনি নিজেই যেতে চান; তাই নয় কি???
.
.
================
#আহমেদ_আলি

Comments

Popular posts from this blog

মানহাজ ও মাযাহাব নিয়ে যত দ্বন্দ্বের জবাব....

[Special thanks to brother Mainuddin Ahmad for providing some important reference] . মানহাজ অর্থ পথ (path) অথবা পদ্ধতিগত বা নিয়মগত বা প্রণালিগত বিদ্যা (Methodology)। মানহাজ বললে তাই তাকে দুই ভাবে ভাবা হয় - ১) সহিহ মানহাজ, ২) ভ্রান্ত বা বাতিল মানহাজ। . সহিহ মানহা...

কৃষ্ণ কি আল্লাহর নবী ছিল?

এই প্রশ্নটা আমাকেও করা হয়েছে সম্ভবত কয়েকবার। কিন্তু প্রশ্নের উত্তরটা বড়ই জটিল। কারণ এর কোনো যথাযথ উত্তর আমাদের জানা নেই। যদি কৃষ্ণের গোপীদের সাথে লীলার কাজকে সত্য বলে...

Permission of Adultery and Fornication in Hinduism - Remaining Part

Read the previous part here: http:// uniqueislamblog.blogspot.com /2017/11/ permission-of-adultery-and-fornication.html ?m=1 => Condemning physical relationship outside marriage: Generally physical relationship outside marriage is condemned in Hindu Philosophy. Bhagabat Gita says, "There are three gates leading to this hell-**lust**, anger, and greed. Every sane man should give these up, for they lead to the degradation of the soul." (Bhagabat Gita, 16:21) ['Bhagabat Gita As It Is' by His Divine Grace A.C. Bhaktivedanta Swami Prabhupada] This verse indicates that lust or desire outside marriage can lead one to hell if it is not maintained properly. It is further mentioned in Yajur Veda, "O God, **cast aside a lover**, **who cohabits with another's wife** ; **a paramour having illicit connection with a domestic woman** ; **an unmarried elder brother suffering from the pangs of passion** ; younger brother who has married before his elder to ...