Skip to main content

♦ উম্মাহর মধ্যে ভেদাভেদের কারণ মাজাহাব নয়, বরং আমাদের নিজস্ব ত্রুটি!!


ইসলামিক আকিদা ভালভাবে বোঝার জন্য আপনাকে কোনো না কোনো মাজাহাব বা সহিহ মানহাজ এর শরণাপন্ন হতে হবে, কারণ আপনি নিজে থেকে সব খুঁটিনাটি বিষয় একেবারে সঠিকভাবে উদ্ধার করতে পারবেন না।
.
এক্ষেত্রে যদি কোনো মাজাহাবের অনুসরণ করেন, তবে আপনাকে সেই মাজাহাবের ইমামের আকিদা বিশুদ্ধভাবে গ্রহণ করতে হবে।
.
যেমন যদি হানাফি মাজাহাবের অনুসরণ করেন, তাহলে আকিদার মধ্যে সুফি তরিকা বাদ দিয়ে বিশুদ্ধভাবে হানাফি আকিদাকেই গ্রহণ করতে হবে। এ সম্পর্কে ড: আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর বলেন,
.
"কেউ কেউ বলেছেন: আমরা তো ফিকহী বিষয়ে হানাফী, আকীদায় আশআরী বা মাতুরিদী ও তরীকায় কাদিরী, চিশতী বা নকশবন্দী। আমরা কি ফিকহ, আকীদা ও তরীকা সকল বিষয়ে হানাফী হতে পারি না? ইমাম আবূ হানীফার কি কোনো আকীদা ও তরীকা ছিল না? থাকলে তা কী ছিল?
.
প্রকৃতপক্ষে ইমাম আবূ হানীফা (রাহ) আকীদাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন। আমরা দেখব যে, তিনি ফিকহ বিষয়ে কোনো গ্রন্থ রচনা না করলেও আকীদা বিষয়ে কয়েকটি পুস্তিকা রচনা করেছেন, আকীদা বিষয়ক জ্ঞানকে শ্রেষ্ঠ ফিকহ বা ‘আল-ফিকহুল আকবার’ বলে আখ্যায়িত করেছেন এবং ফিকহী বিষয়ে ইজতিহাদ ও মতভেদের অনুমতি দিয়েছেন কিন্তু আকীদা বিষয়ে ইজতিহাদ ও মতভেদ নিষেধ করেছেন।"[১]
.
এটা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, আকিদা বিষয়ে মতবিরোধের কোনো অবকাশ নেই, ফিকহী বিষয়ে মতভেদ থাকুক বা না থাকুক। আর তাই এই আকিদা হল "আহলে সুন্নাত আল জামাআত" এর প্রতিষ্ঠিত আকিদা যার কোনো পরিবর্তিত ব্যাখ্যা বাতিল বলে গণ্য হবে।
.
এটা শাফেয়ী, মালেকী বা হাম্বলি মাজাহাবের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আকিদা বিষয়ে সালাফি বা আহলে হাদিস গোষ্ঠী যে মু্হাম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহাব এর "কিতাবুত তাওহীদ" এর কথা বলে থাকে, সেই আব্দুল ওয়াহাব সাহেবও ছিলেন হাম্বলি মাজাহাবের অনুসারী।
.
এখানে মাজাহাব বা সহিহ মানহাজ হল প্রাইভেট টিচার এর মত যা  আপনাকে ইসলামিক বিষয়কে ইসলামিক স্টাইলে শেখার পথ দেখিয়ে দেয়। ফিকহী বিষয়ে যে ক্ষেত্রে মতভেদ রয়েছে, সেক্ষেত্রে যে মতটি আপনার কাছে সবচেয়ে সঠিক ও যুক্তিপূর্ণ বলে মনে হয়, সেই মতটি আপনি গ্রহণ করতে পারেন। কিন্তু চার ইমাম আর অন্যান্য ফিকহ্ বিশারদদের মতামত না জেনে আপনি নিজে থেকে নিজে নিজে সব ব্যাখ্যা বানিয়ে ইসলামকে নিজের স্টাইলে পালন করতে পারেন না। কারণ এক্ষেত্রে সহিহ ইসলামের পরিবর্তে আপনার পথভ্রষ্ট পথে চলে যাওয়ার প্রবণতাই বেশি।
.
আমাদের সমাজে মূল সমস্যাটা অন্য জায়গায়। সেটা হল, আমাদের সমাজে লোকেরা কোনো মাজাহাব বা মানহাজ অনুসরণ করে ঠিকই, কিন্তু জ্ঞান বৃদ্ধির সাথে সাথে সেগুলো নিজেরা যাচাই করে না; অথবা যাচাই করলেও ফিকহী বিষয়ে মতবিরোধ নিয়ে বিতর্কের সময় তারা নিরপেক্ষ ও যুক্তিপূর্ণ বিতর্কের পরিবর্তে দলাদলির মাধ্যমে অন্য দলের নিন্দাই বেশি করে। এতে করে তারা নিজেদের দলকে ইসলামের স্বতন্ত্র একটি গোষ্ঠী হিসেবে তুলে ধরে। অথচ দ্বীনের মধ্যে আপনার একটাই পরিচয়, সেটা হল আপনি মুসলিম। আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলছেন:
.
"...বলে দাও, তোমরা এ বিষয়ে সাক্ষী থাক যে, আমরা মুসলিম।"[২]
.
আপনি কোন্ শিক্ষকের অনুসারীদের  ব্যাখ্যাকে অনুসরণ করলেন, এটা আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু আপনি যখন নিজেকে "মুসলিম" বলে পরিচয় দেওয়ার পরিবর্তে সেই দলেরই(যে দলের ব্যাখ্যা আপনি অনুসরণ করছেন) পরিচয় দিয়ে ভেদাভেদ তৈরি করে অন্য মাজাহাব বা মানহাজের নিন্দা করছেন, তখন আপনার ওপর আল্লাহ তাআলার এই বাণী প্রযোজ্য হবে:
.
إِنَّ ٱلَّذِينَ فَرَّقُوا۟ دِينَهُمْ وَكَانُوا۟ شِيَعًا لَّسْتَ مِنْهُمْ فِى شَىْءٍۚ إِنَّمَآ أَمْرُهُمْ إِلَى ٱللَّهِ ثُمَّ يُنَبِّئُهُم بِمَا كَانُوا۟ يَفْعَلُونَ
.
"যারা নিজেদের (পূর্ণ পরিণত) দ্বীনকে খন্ডে খন্ডে বিভক্ত করে নিয়েছে আর (আপন আপন অংশ নিয়ে) দলে দলে ভাগ হয়ে গেছে, (হে রাসূল) তাদের কোন কাজের সাথে তোমার কোন সম্পর্ক নেই। তাদের ব্যাপারটি পুরোপুরি আল্লাহর ইখতিয়ারভুক্ত। (সময় হলেই) তিনি তাদেরকে জানিয়ে দেবেন তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে।"[৩]
.
সাহাবাদের মধ্যেও বিতর্ক পরিলক্ষিত ছিল; কিন্তু তাঁরা কখনও নিজেদের মুসলিম ব্যতীত দ্বিতীয় কোনো পরিচয় দেন নি এবং আলাদা আলাদা দল তৈরি করে অন্য দলের নিন্দা করেন নি। বরং তারা গঠনমূলক সমালোচনা করেছেন দলিলকে সামনে রেখে নিরপেক্ষভাবে। তাই আমাদেরও উচিৎ হবে নিজেদেরকে তাদের পথে পরিচালিত করা, বিতর্ক করলে দলাদলি না করে নিরপেক্ষতা অবলম্বন করে দলিল ও যুক্তি পেশ করা এবং বিতর্কে সমাধান না এলে ফিকহী বিষয়টি ছেড়ে দিয়ে নিন্দা পরিহার করা। মহান আল্লাহ ঘোষণা করছেন:
.
وَلَا تَكُونُوا۟ كَٱلَّذِينَ تَفَرَّقُوا۟ وَٱخْتَلَفُوا۟ مِنۢ بَعْدِ مَا جَآءَهُمُ ٱلْبَيِّنَٰتُۚ وَأُو۟لَٰٓئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ
.
"তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট নিদর্শন আসার পর (বিভিন্ন দলে) বিভক্ত হয়েছে ও নিজেদের মধ্যে মতান্তর সৃষ্টি করেছে। তাদের জন্য রয়েছে মহা শাস্তি।"[৪]
.
________________________
তথ্যসূত্র:
[১] গ্রন্থঃ আল-ফিকহুল আকবর/অধ্যায়ঃ ভূমিকা/গ্রন্থাকারের ভূমিকা
লেখক: ড: আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর
[২] আল-কোরআন ৩:৬৪
[৩] আল-কোরআন ৬:১৫৯
[৪] আল-কোরআন ৩:১০৫
========================
- আহমেদ আলি

Comments

Popular posts from this blog

মানহাজ ও মাযাহাব নিয়ে যত দ্বন্দ্বের জবাব....

[Special thanks to brother Mainuddin Ahmad for providing some important reference] . মানহাজ অর্থ পথ (path) অথবা পদ্ধতিগত বা নিয়মগত বা প্রণালিগত বিদ্যা (Methodology)। মানহাজ বললে তাই তাকে দুই ভাবে ভাবা হয় - ১) সহিহ মানহাজ, ২) ভ্রান্ত বা বাতিল মানহাজ। . সহিহ মানহা...

কৃষ্ণ কি আল্লাহর নবী ছিল?

এই প্রশ্নটা আমাকেও করা হয়েছে সম্ভবত কয়েকবার। কিন্তু প্রশ্নের উত্তরটা বড়ই জটিল। কারণ এর কোনো যথাযথ উত্তর আমাদের জানা নেই। যদি কৃষ্ণের গোপীদের সাথে লীলার কাজকে সত্য বলে...

Permission of Adultery and Fornication in Hinduism - Remaining Part

Read the previous part here: http:// uniqueislamblog.blogspot.com /2017/11/ permission-of-adultery-and-fornication.html ?m=1 => Condemning physical relationship outside marriage: Generally physical relationship outside marriage is condemned in Hindu Philosophy. Bhagabat Gita says, "There are three gates leading to this hell-**lust**, anger, and greed. Every sane man should give these up, for they lead to the degradation of the soul." (Bhagabat Gita, 16:21) ['Bhagabat Gita As It Is' by His Divine Grace A.C. Bhaktivedanta Swami Prabhupada] This verse indicates that lust or desire outside marriage can lead one to hell if it is not maintained properly. It is further mentioned in Yajur Veda, "O God, **cast aside a lover**, **who cohabits with another's wife** ; **a paramour having illicit connection with a domestic woman** ; **an unmarried elder brother suffering from the pangs of passion** ; younger brother who has married before his elder to ...