Skip to main content

♦মাযহাব ও তাকলীদ সম্পর্কে ইমাম আবু হানিফার মতামত♦


লেখক : ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর
.
আলিম-গবেষকদের জন্য ইজতিহাদী মাসাইলে ইমামের সব কথা নির্বিচারে গ্রহণ করা বা ‘নির্বিচার তাকলীদ’ করার ব্যাপারে ঘোর আপত্তি করতেন ইমাম আবূ হানীফা। ইমাম ইয়াহইয়া ইবন মায়ীন (১৫৮-২৩৩ হি) তাঁর ‘তারীখ’ গ্রন্থে তাঁর উস্তাদ আবূ নুআইম ফাদল ইবন দুকাইন (১৩০-২১৮ হি)-এর নিম্নের বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেন:
.
زفر ثقة... وسمعت زفر يقول كنا نختلف إلى أبي حنيفة ومعنا أبو يوسف ومحمد بن الحسن فكنا نكتب عنه... فقال يوما أبو حنيفة لأبي يوسف ويحك يا يعقوب لا تكتب كل ما تسمع مني فإني قد أرى الرأي اليوم وأتركه غدا وأرى الرأي غدا وأتركه بعد غد
.
‘‘যুফার নির্ভরযোগ্য।... আমি যুফারকে বলতে শুনেছি, আমরা আবূ হানীফার নিকট যাতায়াত করতাম, আমাদের সাথে আবূ ইউসূফ এবং মুহাম্মাদ ইবনুল হাসানও থাকতেন। তখন আমরা তাঁর বলা মাস্আলাগুলো লিখতাম। একদিন তিনি আবূ ইউসূফকে বললেন: ইয়াকূব, তোমার কপাল পুড়ুক! আমার থেকে যা কিছু শোনো সব লিখো না। কারণ আমি আজ একটি বিষয় সঠিক মনে করি কিন্তু আগামীকাল তা পরিত্যাগ করি। আবার আগামীকাল যে মত গ্রহণ করব পরশু তা পরিত্যাগ করব।’’[1]
.
তাঁর মত গ্রহণ বা তাকলীদ বিষয়ে ইমাম আবূ হানীফা (রাহ) বলতেন:
.
هذا رأي النعمان بن ثابت يعني نفسه وهو أحسن ما قدرنا عليه فمن جاء بأحسن منه فهو أولى بالصواب
.
‘‘এ হলো নুমান ইবন সাবিতের (অর্থাৎ তাঁর নিজের) মত। আমাদের ক্ষমতা ও সাধ্যের মধ্যে আমরা এ মতটিই সবচেয়ে ভাল বলে মনে করেছি। কেউ যদি এর চেয়ে ভাল মত দিতে পারেন তবে সেটিই অধিক গ্রহণযোগ্য ও সঠিক বলে গণ্য হবে।’’[2]
.
ইমাম আবূ হানীফা ও তাঁর ছাত্রগণ বলেছেন যে, মুফতী বা আলিমের জন্য কোনো ফাতওয়া বা মাসআলার জন্য কুরআন, হাদীস বা ইজতিহাদের দলীলটি না জেনে শুধু ফাতওয়ার বই থেকে ফাতওয়া দেওয়া নিষিদ্ধ। ইমাম আবূ হানীফা বলেন:
.
لا ينبغي لمن لم يعرف دليلي أن يفتي بكلامي
.
‘‘যে ব্যক্তি আমার দলীল জানে নি তার জন্য আমার বক্তব্য বা মাযহাব অনুসারে ফাতওয়া দেওয়া সঠিক নয়।’’[3]
.
ইমাম যুফার বলেন, আমি ইমাম আবূ হানীফাকে বলতে শুনেছি:
.
لا يحل لمن يفتى من كتبي أن يفتي حتى يعلم من اين قلت
.
‘‘আমি কোন্ দলীলের ভিত্তিতে আমার মত গ্রহণ করেছি তা না জানা পর্যন্ত আমার বই থেকে ফাতওয়া দেওয়া কারো জন্য হালাল নয়।’’[4]
.
এজন্য তিনি তাঁর ছাত্রদেরকে বলতেন:
.
إنْ تَوَجَّهَ لَكُمْ دَلِيلٌ فَقُولُوا بِهِ
.
‘‘যদি তোমরা কোনো দলীলকে গ্রহণযোগ্য বলে দেখতে পাও তবে সে দলীলের ভিত্তিতেই মত প্রদান করবে।’’[5]
.
সাধারণ মানুষের জন্যও হাদীস শুনে তা পালনের বিষয়ে ইমাম আযম তাঁর অনেক ছাত্রের চেয়ে অধিক আগ্রহী ছিলেন। আল্লামা ইবন নুজাইম (৯৭০ হি) বলেন:
.
لَوْ احْتَجَمَ .. فَظَنَّ أَنَّهُ يُفَطِّرُهُ ثُمَّ أَكَلَ .. وَإِنْ لَمْ يَسْتَفْتِ وَلَكِنْ بَلَغَهُ الْخَبَرُ.. أَفْطَرَ الْحَاجِمُ وَالْمَحْجُومُ... وَلَمْ يَعْرِفْ النَّسْخَ وَلا تَأْوِيلَهُ فَلا كَفَّارَةَ عَلَيْهِ عِنْدَهُمَا؛ لأَنَّ ظَاهِرَ الْحَدِيثِ وَاجِبُ الْعَمَلِ بِهِ خِلافًا لأَبِي يُوسُفَ؛ لأَنَّهُ لَيْسَ لِلْعَامِّيِّ الْعَمَلُ بِالْحَدِيثِ لِعَدَمِ عِلْمِهِ بِالنَّاسِخِ وَالْمَنْسُوخِ... وَقَدْ عُلِمَ مِنْ هذا أَنَّ مَذْهَبَ الْعَامِّيِّ فَتْوَى مُفْتِيهِ من غَيْرِ تَقْيِيدٍ بِمَذْهَبٍ
.
‘‘যদি এরূপ সাধারণ মানুষ রোযা-অবস্থায় রক্তমোক্ষণ করে ... তবে সে যদি কারো কাছে ফাতওয়া জিজ্ঞাসা না করে, কিন্তু ‘‘রক্তমোক্ষণকারী ও রক্তমোক্ষণকৃতের রোযা ভেঙ্গে যাবে’’- এ হাদীসটি সে শুনে এবং এ হাদীসের ভিত্তিতে তার রোযা ভেঙ্গে গিয়েছে ভেবে সে পানাহার করে তবে ইমাম আবূ হানীফা ও ইমাম মুহাম্মাদের মতানুসারে তাকে কোনো কাফ্ফারা দিতে হবে না। কারণ হাদীসের বাহ্যিক অর্থ থেকে যা জানা যায় তদানুসারে আমল করা ওয়াজিব। ইমাম আবূ ইউসুফের মতে তাকে কাফ্ফারা দিতে হবে; কারণ একজন অশিক্ষিত সাধারণ মানুষের জন্য হাদীস অনুসারে আমল করার বিধান নয়; কারণ সে একাধিক হাদীসের মধ্যে কোনটি দ্বারা কোনটি রহিত তা জানে না।... এ থেকে জানা যায় যে, সাধারণ মানুষের মাযহাব হলো তার মুফতীর ফাতওয়া, এক্ষেত্রে কোনো একটি মাযহাব নির্ধারণ প্রয়োজনীয় নয়।’’[6]
.
উল্লেখ্য যে, এটি সুনানগ্রন্থগুলোতে সংকলিত সহীহ হাদীস। এর বিপরীতে বুখারী সংকলিত হাদীসে ইবন আব্বাস (রা) বলেন: ‘‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সিয়াম অবস্থার রক্তমোক্ষণ করেন।’’[7] অর্থাৎ সিয়াম অবস্থায় রক্তমোক্ষণে সিয়াম ভাঙ্গবে না।
.
লক্ষণীয় যে, ইমাম আবূ হানীফা এ ব্যক্তির অপরাধ গৌণ বলে গণ্য করেছেন। তবে মূলত এটি অপরাধ। হাদীসটি সহীহ কি না এবং এর বিপরীতে সহীহ হাদীস আছে কিনা তা গবেষণা না করে একটি হাদীসকে সহীহ শুনেই গ্রহণ করা মুমিনকে বিভ্রান্ত করতে পারে। ফিকহী মাসআলার ন্যায় হাদীসের মান নির্ধারণে অন্ধ তাকলীদও নিন্দনীয়।
.
_________________
তথ্যসূত্র:
[1] ইবন মায়ীন, আত-তারীখ (দূরীর সংকলন) ৩/৫০৩-৫০৪। [2] শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলবী, হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা ১/২০৩; খতীব বাগদাদী, তারীখ বাগদাদ ১৩/৩৫২; নুমান ইবন মাহমূদ আলূসী, জালাউল আইনাইন, পৃ. ২০৩। [3] শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলবী, হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা ১/৩৩১। [4] ইবন আব্দুল বার্র, আল-ইনতিকা, পৃ. ১৪৪-১৪৫। [5] ইবন আবিদীন, হাশিয়াতু রাদ্দিল মুহতার ১/৬৭। [6] ইবন নুজাইম, আল-বাহরুর রায়িক ২/৩১৫-৩১৬। [7] বুখারী, আস-সহীহ ২/৬৮৫।
.
.
.
আরও পড়ুন:
ইমাম আবু হানিফার সংক্ষিপ্ত জীবনী

Comments

Popular posts from this blog

মানহাজ ও মাযাহাব নিয়ে যত দ্বন্দ্বের জবাব....

[Special thanks to brother Mainuddin Ahmad for providing some important reference] . মানহাজ অর্থ পথ (path) অথবা পদ্ধতিগত বা নিয়মগত বা প্রণালিগত বিদ্যা (Methodology)। মানহাজ বললে তাই তাকে দুই ভাবে ভাবা হয় - ১) সহিহ মানহাজ, ২) ভ্রান্ত বা বাতিল মানহাজ। . সহিহ মানহা...

কৃষ্ণ কি আল্লাহর নবী ছিল?

এই প্রশ্নটা আমাকেও করা হয়েছে সম্ভবত কয়েকবার। কিন্তু প্রশ্নের উত্তরটা বড়ই জটিল। কারণ এর কোনো যথাযথ উত্তর আমাদের জানা নেই। যদি কৃষ্ণের গোপীদের সাথে লীলার কাজকে সত্য বলে...

Permission of Adultery and Fornication in Hinduism - Remaining Part

Read the previous part here: http:// uniqueislamblog.blogspot.com /2017/11/ permission-of-adultery-and-fornication.html ?m=1 => Condemning physical relationship outside marriage: Generally physical relationship outside marriage is condemned in Hindu Philosophy. Bhagabat Gita says, "There are three gates leading to this hell-**lust**, anger, and greed. Every sane man should give these up, for they lead to the degradation of the soul." (Bhagabat Gita, 16:21) ['Bhagabat Gita As It Is' by His Divine Grace A.C. Bhaktivedanta Swami Prabhupada] This verse indicates that lust or desire outside marriage can lead one to hell if it is not maintained properly. It is further mentioned in Yajur Veda, "O God, **cast aside a lover**, **who cohabits with another's wife** ; **a paramour having illicit connection with a domestic woman** ; **an unmarried elder brother suffering from the pangs of passion** ; younger brother who has married before his elder to ...